ফ্যাসিবাদের দোসর বিআইডব্লিউটিএ'র শীর্ষ দুনীতিবাজ পরিচালক শাহাজান এখনো বহাল তরিয়াতে

স্বৈরাচারী লীগ সরকারের আমলে দাপট দেখিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা মহা দুনীতিবাজ বিআইডব্লিউটিএ এ-র নৌ- সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের পরিচালক মোঃ শাহাজাহান রয়েগেছেন এখনো বহাল তরিয়াতে। সুত্রে যানা যায় বিগত লীগ সরকারের আমলে তাঁর বিরুদ্ধে ভরী ভরী আর্থিক দুনীতির অভিযোগ থাকলেও পতিত লীগ সরকারের আমলা মন্ত্রী দের ছত্র ছায়ায় থেকে ঘুষ দুনীতি চালিয়ে গেছেন দেদারসে। তার অবৈধ টাকার প্রভাবে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা দের কে পরোয়া করতেননা। বিগত সময়ে একাধিক পত্রিকাতে শাহজাহান এর বিরুদ্ধে রিপোর্ট প্রকাশিত হলে মন্ত্রণালয় থেকে তেমন কোন কার্যকরী পদক্ষেপ না নেয়াতে আরও বেপরোয়া হয়ে ঘুষ দুনীতি চালিয়ে গেছেন তিনি। সুত্রে আরও যানা যায় যে বিগত পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের সাবেক নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান এবং নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী মাহমুদ চৌধুরীর দোসর হিসেবে পরিচিত বিআইডব্লিউটিএ এর শীর্ষ দুর্নীতিবাজ এবং জাল জালিয়াতির মাস্টার মাইন্ড হিসেবে পরিচিত নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালনা বিভাগের সাবেক পরিচালক বিআইডব্লিউটিএতে এখনো দাপটের সাথে বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
এই দুর্নীতিবাজ পরিচালক চাকরিতে বহাল থেকে কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশ করে বিআইডব্লিউটিএর সর্বস্তরে অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করছেন। পতিত সরকারের আমলে মোঃ শাহজাহান বিভিন্ন ক্ষমতার দাপট খাটিয়ে জাল-জালিয়াতি এবং ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে তেল খরচের নামে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন। এসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা অনেকের নামে দুদক এবং বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যানের দপ্তরে দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ জমা পড়লেও অদৃশ্য কারণে কোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না।
নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালনা বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের পরিচালক মোঃ শাহজাহানের নিজস্ব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নৌ-সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের বিরুদ্ধে বছরের পর বছর দুর্ঘটনায় উদ্ধারকারী জাহাজ পরিচালনায় ভূয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে তেল খরচের নামে সরকারি বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তদন্ত করে দুদক। তদন্তে নেমে দুদক নারায়ণগঞ্জের নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নথিপত্রের ব্যাপক গরমিল পায়।
বিআইডব্লিউটিএ এর নৌ-সংরক্ষণ ও পরিচালন কর্তৃপক্ষ নারায়ণগঞ্জে কার্যালয়ে সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জে পূর্বে প্রত্যয় ও নির্ভীক নামে দুটি উদ্ধারকারী জাহাজ ছিল। তবে নির্বিক এখন বরিশাল থেকে পরিচালিত হয় আর নারায়ণগঞ্জ থেকে উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় পরিচালিত হয়। বিআইডব্লিউটিএর নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন কর্তৃপক্ষ নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের অদূরে শহরের ৫ নম্বর ঘাটের শীতলক্ষ্যা নদীতে নোঙ্গর করা থাকে আড়াইশো টন ওজনের উত্তোলন ক্ষমতা সম্পন্ন উদ্ধার জাহাজটি। এই জাহাজের ভূয়া তেল খরচের বিল ভাউচার তৈরি করে পরিচালক শাহজাহানের নেতৃত্বে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়।
বিআইডব্লিউটিএর নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বয়া বিকন বাতি যা প্রজেক্ট তৈরি করে বিদেশ থেকে আমদানি করে থাকে কিন্তু পরিচালক শাহজাহান তার নিজস্ব ঠিকাদারি সিন্ডিকেটের মালিক বাহারের কোম্পানির নামে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এই কোম্পানির নামে ভুয়া বিল বানিয়ে লুট করে হাতিয়ে নিয়েছেন সরকারি বিপুল পরিমাণ অর্থ। এ ছাড়াও পরিচালক শাজাহান তার নিজস্ব ঠিকাদারি সিন্ডিকেটের মালিক বাহারের সাথে যৌথ মালিকানায় বিভিন্ন নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তৈরি করে ভূয়া বিল ভাউচার করে লুটপাট করছেন সরকারি কোটি কোটি টাকা এবং এই কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই এই দপ্তরের সমস্ত কাজগুলি পেয়ে থাকেন। আখি এন্টারপ্রাইজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে টিপি- ১৩৫, ভূয়া বিল করে হাতিয়ে নিয়েছেন ৭ লাখ ৭২ হাজার টাকা , তানিয়া এন্টারপ্রাইজের নামে এমপি ১২ এর ভূয়া বিল করে হাতিয়ে নিয়েছেন ৬ লাখ ৮১ হাজার টাকা। তানজিল ডক ইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস এর নামে টিপি ৮০ এর ভূয়া বিল বাবদ ৭ লাখ ১৩ হাজার ৩৫২ টাকা, তানজিল ডক ইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস এর নামে টিপি ১৭৩ এর ভূয়া বিল ৯ লাখ ৩৬ হাজার টাকা, তানিয়া এন্টারপ্রাইজ এর নামে স্পিড বোট-১ মেরামতের ভূয়া বিল ৮, ৮৪১০০/ আলিফ এন্টারপ্রাইজের নামে টিপি ৪৫ এর ভূয়া বিল করে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ১৫১ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।এভাবে তিনি বিভিন্ন অনিয়ম এবং জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ভূয়া বিল ভাউচার করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে গড়েছেন অঢেল সম্পদ।
রাজধানী ঢাকার বাড়ির নং ৫৮/৩০/গ উত্তর মুগদাতে আলিফ গার্ডেন নামক বাড়িটিতে দুটি অত্যাধুনিক ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন প্রায় তিন কোটি টাকা দিয়ে। উত্তর মুগদার ঝিলপাড় রোডের ৫৪ নং বাড়িতে ক্রয় করেছেন দুই কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি আলিশান ফ্ল্যাট। ফতুল্লা লঞ্চ ঘাটের নদীর পশ্চিমপাড় কেরানীগঞ্জ থানাধীন এলাকায় ঠিকাদার বাহারের সাথে যৌথ মালিকানায় প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ডক ইয়ার্ড তৈরি করেছেন। মোঃ শাহজাহান এবং লিমা তাবাসসুম এর নামে আর এস দাগ নং ১৮৩৩, ইসলামনগর, পাথালিয়া ইউনিয়ন, আশুলিয়া ঢাকাতে ১০ কাঠা জায়গার উপর প্রায় ২০ কোটি ব্যায়ে নির্মাণ করেছেন একটি ৫ তলা যুগ্ম ভবন। ঢাকা সাভার বাজারের অন্ধ মার্কেটের দুই তলায় ক্রয় করেছেন দুটি দোকান। সাভার কাঠগড়ায় নির্মাণ করেছেন চার ইউনিটের আরো একটি সাত তলা ভবন যার বাজার মূল্য আনুমানিক ২০ কোটি টাকা। মোহাম্মদপুর হাউজিং এ প্রায় ৭ কোটি টাকা দিয়ে ক্রয় করেছেন ৬ শতাংশ জমি।
এছাড়াও ঢাকার রামপুরা এবং হাতিরপুল এলাকায় একাধিক ফ্লাট এবং বাড়ি তৈরি করেছেন বলে বিশ্বস্থ সূত্রে জানা যায়। এর বাইরে পরিচালক শাহজাহানের নামে বেনামে ঢাকা এবং সাভারে একাধিক প্লট ক্রয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যাংকে গচ্ছিত রেখেছেন কোটি কোটি টাকা। পরিচালক শাহজাহানের এক নিকট আত্মীয়র সাথে কথা বলে তিনি জানান, শাহজাহান নিজ গ্রামে অর্থাৎ দাগন ভূঁইয়া উপজেলার পাশে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে একটি হিন্দু বাড়ি ক্রয় করেছেন যার বর্তমান আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য মো: শাহজাহান এর সেল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি।